বুধবার, ৭ জুলাই, ২০১০

অভ্র-বিজয় সমঝোতা পরবর্তী উপাখ্যান

সম্প্রতি অভ্র-বিজয় সমঝোতা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কিছু বিশ্লেষণ ও পরবর্তী বিষয় নিয়ে এই লেখার অবতারণা।

অভ্র
২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ, ওমিক্রনল্যাব থেকে অভ্র কীবোর্ড নামে কম্পিউটারে বাংলা লেখার একটি ফ্রী সফটওয়্যার প্রকাশ করা হয়, যা দিয়ে ধ্বনি অনুযায়ী (ফনেটিক) ও সুনির্দিষ্ট (ফিক্সড) লেয়াউট উভয় পদ্ধতিতে লেখা যায়। কীবোর্ড ছাড়াও ওমিক্রনল্যাবের সৃষ্ট আরো ফ্রী অবদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অভ্র কনভার্টার ও ফন্ট। ৪ এপ্রিল ২০১০, আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ও বিজয় সফটওয়্যারের সত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার জনকন্ঠ পত্রিকায় অভ্রকে পাইরেটেড ও এর উন্নয়নকারীদেরকে হ্যাকার বলেন। ব্লগে, ফোরামে ও ফেসবুকে এ অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ওমিক্রনল্যাবের পক্ষ থেকে মেহদী হাসান খান অভিযোগ অস্বীকার করে জবাব দেন। ২৫শে এপ্রিল ২০১০, জব্বার বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে মেহদীর বিরুদ্ধে কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ করেন।

সমঝোতা
১৬ জুন ২০১০, আগারগাঁও-এ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্যপ্রযুক্তিবিদের উপস্থিতিতে অভ্র ও বিজয়ের সমঝোতা হয়েছে। এটি একটি আনন্দের ব্যাপার। দুর্নীতিতে জর্জরিত বাংলাদেশে, অভ্র প্রতাপশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করে ধরাশায়ী করবে সেটা আশা করা যাচ্ছিল না। তার উপরে লড়াইটা আদালতে হলে একরকম। কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযোগ সরকারি কপিরাইট অফিসে। সরকারি কাজের প্রতি মানুষের আস্থা এখন যথেষ্ট প্রশ্ন সাপেক্ষ। ভরসা নেই বললেই চলে। দীর্ঘসুত্রীতা, নাজেহাল'তো আছেই। উপরন্তু এই অফিসের লোকজনদেরকে পকেটে ঢুকিয়ে রাখেনি, তা হলফ করে বলা যাবে না। কিছু মন্তব্য থেকে সে রকম লক্ষণ অনুমাণ করা অযৌক্তক নয়।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেনঃ আইনি সহায়তা এখন দুর্লভ বস্তু। একলাখ টাকার কমে আইনজীবীরা এখন জামিনের জন্যে আবেদনে হাত দেয় না (সূত্র)। অতএব, আদালত পর্যন্ত গড়ালে অভ্র টিমের কী নির্মম ভোগান্তি হোতো তা চিন্তা করা যায় না। মেহদী হাসান খান ও তার টিমের উপর বড় জরিমানার মত কঠিন খড়্গ আঘাত পড়া অসম্ভব ছিল না।
অভ্র'র প্রচুর ব্যবহারকারী রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে অভ্র'র জন্যে লড়াইয়ে নিবেদিত। ব্যবহারকারীর চেয়েও বেশী আছেন শুভাকাংখী। ব্লগে, ফোরামে ও ফেসবুকে অভ্র'র সমর্থনে যে গণ-জাগরণ চালু হয়েছে সেটাও উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তবে আইনি যুদ্ধে অভ্রকে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে, জিতিয়ে আনা যেতো কিনা। অত্যাধিক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আইনি রণক্ষেত্রে হেরে যাওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত সমসাময়িক বিশ্বে রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ও জে সিম্পসন মার্ডার কেস (O. J. Simpson Murder Case)। বিপক্ষে বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও সিম্পসন আইনি লড়াইয়ে জিতে যায় অর্থ শক্তি দিয়ে।
যদি ধরে নেয়া হয় যে, কপিরাইট অফিসে অভ্র জিতে গেলো, তবে আদালতে মামলা করার ঘোষণা আগেই দেয়া। সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত তার চেষ্টা দেখা যেতো। মনে করি, শেষ পর্যন্ত অভ্র জিতে গেলো। কিন্তু এর জন্যে যে পরিশ্রম, সময় ও অর্থ খরচ হতো তা কল্পনা করলে আঁৎকে ওঠার মতো। অধিকন্তু, শুধু একটা ইউনিবিজয় লেয়াউটের জন্যে ব্যয়টা একেবারে অযৌক্তিক।
এ সমস্ত প্রেক্ষিত বিবেচনা করে, সমঝোতা অভ্র'র জন্যে লাভজনক হয়েছে।

অভ্র'র জয়
প্রকৃতপক্ষে, অভ্র'র জয় হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, যুগে যুগে মহৎ লোকেরা প্রতিনিয়ত শান্তির পক্ষে ছিলেন। কিছু লোক সবসময় ধান্ধা ছাড়া কিছু বোঝেনা এবং ঝামেলা পাকাতে ওস্তাদ। আর এই সব ঝামেলার শিকার হতে হয় মহৎ লোকদের। কিন্তু সেখানেও তারা মহত্ত্বের পরিচয় দেন। নিজের ক্ষতি স্বীকার করে হলেও তারা দ্বন্ধের সুরাহা করে ফেলেন। সার্বজনীন মঙ্গলটা তারা সামনে রেখে চলেন। তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে সাময়িক ক্ষতি স্বীকার করে অগ্রসর হতে থাকেন।
পাইরেসির অভিযোগ অনেক দিন ধরে অভ্র'র জন্যে একটা পথের কাঁটা হয়ে থেকেছে। অনেক ক্ষেত্রে, সীমা অতিক্রম করে, বিভিন্ন পর্যায়ে অভ্রকে নিয়ে আপত্তিকর কথা (চোর) বলা হয়েছে। কখনো অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে উদ্ভট সব দাবী এসেছে, যেমনঃ সরকারী ওয়েব সাইটগুলো হ্যাক হওয়ার পিছনে অভ্র দায়ী। হাহ্!
এক সময়, পুরো অভ্রকে পাইরেটেড বলা হতো। তারপর সেটা বাদ দিয়ে, ইউনিবিজিয় লেয়াউটকে মোক্ষম লক্ষবস্তু বানানো হয়।
এ যাত্রায় অভিযোগের কাঁটা পথ থেকে দূর হলো। ওমিক্রনল্যাবকে উৎপীড়নকারীর মুখে অভ্র নিয়ে উচ্চ-বাচ্চ করতে পারার মত আর কোনো ইস্যু নেই। মুখ বন্ধ হলো। এখনেই অভ্র'র জয়।
ইতিহাসে দেখা যায়, সমঝোতা সন্ধির পর মহৎ লোকদের দল লাভবান হয় ও সামনে অগ্রসর হয়। আর পশ্চাৎধাবন করে প্রতিপক্ষ। নিয়তি এক সময় এদের বিলীন করে দেয়। গত মে মাসে, বাংলাদেশ মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয় থেকে সবগুলো মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দাপ্তরিক কাজে ইউনিকোড বাংলা ব্যবহার করার জন্যে। এবং ওমিক্রনল্যাব থেকে অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিয়েছে (সুত্র)। এরকম নির্দেশ সব জায়গায় আসবে।

অভ্র ও কীবোর্ড লেয়াউট
সমঝোতা অনুযায়ী, অভ্র থেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউট সরিয়ে নেয়া হবে। কেউ কেউ মনে করছে, এতে অভ্র'র সমস্যা বা লোকসান হবে। কিছু সংখ্যক ব্যথিত, হতাশ, অপমানিত বা রাগান্বিত হয়েছে। কিছু বাঙ্গালীর আবেগ প্রবণতা নিয়ে, নতুন করে আর কী বলার আছে? হার-জিতের একটা খেলায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা হারার পর ঐ দলের ও খেলোয়াড়দের মুন্ডুপাত করে। বাকরুদ্ধ হতে হয় যখন সাংঘর্ষিক ও আত্মঘাতি (সূত্র১, সূত্র২) দূর্ঘটনা দেখা যায়।
প্রকৃত পক্ষে, অভ্র থেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউট সরিয়ে নেয়াটা মেহেদীর শুধু একটা ঘোষণা মাত্র (অফিসিয়ালি অভ্র’র পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি)। অভ্র'র অনেক দারুণ দারুণ বৈশিষ্টের একটি হচ্ছে, এখানে নিজের ইচ্ছে মত নতুন যে কোনো কীবোর্ড লেয়াউট বানানো এবং পুরনো লেয়াউটকে পুনর্বিন্যাস করে, নয়া লেয়াউট হিসেবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যায়। এবং এই নতুন বানানো কীবোর্ড লেয়াউটগুলো যে কারো সাথে শেয়ার করা যায়। প্রাপ্ত লেয়াউট উইন্ডোজের 'C:\Program Files\Avro Keyboard\Keyboard Layouts' ফোল্ডারে কপি করে দিলেই তা ব্যবহার উপযোগী হয়ে যায়। তেমনিভাবে ঐ ফোল্ডারে বিদ্যমান কীবোর্ড লেয়াউট ফাইল মুছে দিলে সেই লেয়াউট অভ্র সফটওয়্যারে আর ব্যবহার করা যা্য না। অতএব, কোনো কীবোর্ড লেয়াউট সরানো বা যোগ করা অভ্র সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে কোনো ঘটনাই না। কারো অভ্র'র সাথে ব্যবহারের জন্যে যদি ইউনিবিজয় বা বিজয়ের কীবোর্ড লেয়াউট দরকার হয় তা অনায়াসেই পাওয়া যায় এবং যাবে।
অনেকে হয়ত শুনে অবাক হতে পারেন যে, অভ্র'তে শুধু বাংলা ভাষা নয়, অন্য ভাষার কীবোর্ড লেয়াউট পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, যেমনঃ জাপানী। আমি দুই ধরণের জাপানী লিখন পদ্ধতি- হিরাগানা (৬৬টি বর্ণ) ও কাতাকানার (৬৬টি বর্ণ) জন্যে দুটি আলাদা কীবোর্ড লেয়াউট বানিয়ে পরীক্ষা করে সফল হয়েছি। তৃতীয় জাপানী লিখন পদ্ধতি, কাঞ্জি (প্রায় ৩০+ হাজার সংকেত)। বলা বাহুল্য, এর জন্যে কোনো কীবোর্ড লেয়াউট নেই। হিরাগানা ও কাতাকানাতে, ইংরেজীর মত কোনো যুক্তাক্ষর না থাকায়, অভ্র দারুণ কাজ করে। নিশ্চিত করে বলা যায়, যুক্তাক্ষর নেই এরকম ভাষার লিপি লিখতে অভ্র'র বর্তমান প্রচলিত ভার্সন নিঁখুত কাজ করবে।

বাংলা প্রমিত লেয়াউট
জাতির দুর্ভাগ্য যে, বাংলা ভাষার কোনো সর্বজন স্বীকৃত প্রমিত কীবোর্ড লেয়াউট নেই, অথচ, একটি প্রচলিত লেয়াউটের কপিরাইট ও পেটেন্ট সংরক্ষিত আছে। তার জন্যেও বাঙ্গালীর ক্ষোভ আছে। কিন্তু এখানে অভ্র’র উপরে ফোকাস করছি বলে সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

কাজের সময়
এখন সময় এসে গেছে পুরো দমে কাজে নেমে পড়ার। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় –
চল চল চল
ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।
ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটাব তিমির রাত
বাঁধার বিন্ধ্যাচল।...
কাজ আছে বহু। শুধু ওমিক্রনল্যাবের উপরে সব কাজের দায়িত্ব চাপাতে একেবারে অনিচ্ছুক। তাদের অবদান দেখে তাদের কাছে জোর দিয়ে কিছু চাইতে একটু লজ্জা করে। অভ্র'কে ওপেন সোর্স হিসেবে প্রকাশের দাবি শোনা যায়। অভ্র'র লিনাক্স ভার্সনের সোর্স প্রকাশিত আছে। মেহদী হাসান খান উইন্ডোজ ভার্সনের সোর্স প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন ডিসেম্বর ২০০৭ এ। যে সব কারণে এখনো সোর্স প্রকাশ করা হয়নি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিরাপত্তা সমস্যা। অভ্র ও ওপেন সোর্সের সমাধান করবে সময়।

যাদেরকে অনুরোধ
তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ জন রয়েছেন দেশে ও বিদেশে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রচুর নজর কাড়া অবদান রয়েছে। নিঃসন্দেহে, যে কোনো বিভাগে আস্থা রাখার মত জনসম্পদের ঘাটতি নেই। তাদের উপর ভরসা রেখে এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা। আর কিছু বিষয় সর্বসাধারণের জন্যে।

ম্যাক ভার্সন
অভ্র'র ম্যাক ভার্সন এখনো বের হয়নি। কি পরিমাণ বাংলা ভাষাভাষী ম্যাক ব্যবহার করেন সেটি হয়ত একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজয়ের ম্যাক ভার্সন আছে। ছোট ক্ষেত্র হলেও এইখানে অভ্র বিজয়কে কোনো প্রতিযোগীতার মুখোমুখি করতে পারছে না। এ কারণে, এটিকে কাজের তালিকায় উপরের দিকে রাখতে হয়।

প্রিন্ট মিডিয়া, ফন্ট ও উন্নয়ন
দ্বিতীয় গুরুত্বপুর্ণ হলো, প্রিন্ট মিডিয়াতে অভ্রকে প্রতিষ্ঠিত করা। এখানে বিজয় যে অবস্থানে আছে, তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এই জ্বালা শুধু সয়ে যাচ্ছি। এরকম অনেকে আছেন, যারা সব ক্ষেত্রে অভ্র ব্যবহার করেন, কিন্তু প্রিন্টের কাজের জন্যে অভ্র ব্যবহার করতে না পেরে পথ চেয়ে আছেন কবে সেই দিন আসবে। বাজি ধরে বলা যায়, প্রিন্ট মিডিয়াতে যখন অভ্র আধিপত্য বিস্তার শুরু করবে, বিজয় তখন যাদুঘরে চলে যাবে। এজন্যে হয়ত অভ্রকে কিছু গভীরে ভাবতে হবে এবং সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রিন্ট মিডিয়ায় এবং বাদ বাকি ক্ষেত্রে ফন্ট ডিজাইনের কাজ রয়েছে। ভালো ও ফিচার সমৃদ্ধ ফন্টের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এছাড়া অভ্রকে আরো নতুন নতুন বৈশিষ্টমন্ডিত করার জন্যে অনেক প্রস্তাব ইতিমধ্যে আছে। যারা দেশে-বিদেশে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা সম্পর্কিত কাজ করেন তারা এখানে অবদান রাখেন।

অভ্র-টি শার্ট
অভ্র সফটওয়্যার উন্নয়নের সাথে সাথে প্রচারের মাধ্যমে একে সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। টি-শার্ট ছাপিয়ে অভ্র'র প্রচারের জন্যে একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। যারা ছাপিয়েছেন তারা অভ্র'র প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে এটা করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। অভ্র টি-শার্টের প্রচলন বৃদ্ধি পাক আরো জোরেসোরে। প্রিয়জনকে দেয়া আমাদের উপহার হোক অভ্র টি-শার্ট।

সাইট লিংক যোগ করা
অনলাইনে ব্যক্তিগত, সঙ্ঘ, প্রতিষ্ঠান বা ফোরামের ওয়েব সাইটে অভ্র'র তথ্য উপস্থাপন করা এবং সেখানে ওমিক্রনল্যবের লিংক যুক্ত করা। এতে অভ্র'র যে শক্তিশালী ব্যবহারকারী গোষ্ঠী রয়েছে তার প্রমাণ থাকে ইন্টারনেটে। কেউ চাইলে অনলাইন পরিসংখ্যান চালিয়ে অভ্র গোষ্ঠী সম্পর্কে ভৌগলিক অবস্থান, বিষয়বস্তু/ক্ষেত্র ও অন্যান্য ভিত্তিক চমকপ্রদ তথ্য নির্ণয়-বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করতে পারেন।
উপরন্তু, অধিক সংখ্যক ইনলিংক (www.omicronlab.com এর প্রতি রেফারেন্স) পেলে ওমিক্রনল্যাবের সাইট সার্চ র‌্যাঙ্ক অনেক বেড়ে যাবে। এতে ওমিক্রনল্যাবে বিদ্যমান তথ্যের মূল্য গুগল বা ইয়াহু ইত্যাদির কাছে বৃদ্ধি পাবে। ফলে, সার্চ এঞ্জিনের মাধ্যমে আগের চেয়ে বেশী মানুষ ওমিক্রনল্যাবের সাইটে ঢুকবে, যা নিঃসন্দেহে অভ্র ব্যবহারকারী বাড়াবে।
আশ্চার্য মনে হলেও সত্যি, যারা বিজয় খুঁজবে, তারাও ওমিক্রনল্যাবে ঢুকবে। বর্তমানে 'বিজয় কীবোর্ড' বা 'bijoy keyboard’ দিয়ে গুগলে খুঁজলে, প্রথম দিকে প্রকৃত বিজয়ের কোনো সাইটের গন্ধও পাওয়া যায় না, বরং অন্যান্যের সাথে ওমিক্রনল্যাবের সাইটও আসে। অপরদিকে, ‘Avro Keyboard’, ‘অভ্র কীবোর্ড’ বা শুধু ‘অভ্র’ দিয়ে সার্চ করলে, ওমিক্রনল্যাবের আগে কেউ নেই। এটাকি অভ্র'র জয়ের প্রমাণ নয়?
প্রসঙ্গক্রমে বলা, বাংলাইংরেজী উইকিপিডিয়ায় অভ্র কীবোর্ডের বর্ণনা, উন্নয়ন, বৈশিষ্ট ইত্যাদির উপর দুটি সন্তোষজনক নিবন্ধ রয়েছে। বিজয় সংক্রান্ত উইকিপিডিয়াতে আদৌ কোনো নিবন্ধ নেই।
অনলাইন সার্চ রেজেল্টে অভ্র'র প্রাধান্যের ব্যপারটি প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছে অভ্রকে পৌঁছাতে ব্যাপক সাহায্য করে। আমাদের মূলধারার মিডিয়াগুলোতে ব্যবহারিক প্রয়োগ ও প্রকাশনাতে অভ্র'র উপস্থিতি এখনো সেরকম পর্যায়ে নয় (প্রবাসীরা অনেকে পত্রিকার ভিতরের পৃষ্টাগুলো দেখেন না) বলে অনেক প্রবাসী এর সম্পর্কে অনবহিত। তবে মূলধারাতেও জোয়ারের ধাক্কা লাগছে ভালোভাবে।

গল্প ও ব্লগ
সচলায়তনে অসাধারণ একটা রূপকথার গল্প লিখেছেন নীড় সন্ধানী, 'আন্ডামারার যদু কাগু'। এরকম একটা গল্প এক মাসের সমান প্রচারের কাজ দেয়। মানুষের মনে গেথে যায় অভ্র-বিজয়ের প্রকৃত রূপ। তাকে আর বোঝানোর দরকার হয় না। নিজেই অভ্র'র প্রচারে নেমে পড়ে। এরকম মূলধনী গল্প সামনে আরো আসবে সে আশা রাখছি।
আর ব্লগারদের কথা বলা বাহুল্য। অভ্র'র অবদানে ব্লগের আজ এ অবস্থান। তারা সমর্থন জানিয়ে ও নিত্য-নতুন চৌকশ আইডিয়া উপস্থাপন করে যান।

গ্রাফিকস ও মাল্টিমিডিয়া
আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো সচিত্র প্রচার। মাল্টিমিডিয়াও এখানে উল্লেখ্য। গ্রাফিক/এনিমেশন ডিজাইন যারা করেন তারা অভ্র’র উপর প্রচারমুলক (অথবা বিজয়কে ধিক্কারমুলক) বিভিন্ন ব্যানার, কার্টুন তৈরী করেন। এগুলো ভালো কাজ দেয়।

ইমেইল সাক্ষরের মাধ্যমে
একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, কোনো বিষয়ে সাধারণভাবে আমরা যখন জেনে যাই তখন সেটাকে যতটুকু গুরুত্ব দেই তার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই যখন কোনো পরিচিত জনের কাছ থেকে বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত হই বা কেউ একজন ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বলে। আমাদের ইমেইল যোগাযোগের ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। তাই যখন কোনো বাংলা ভাষাভাষীর সাথে ইমেইলে কথা হয় সেটা আমরা অভ্র দিয়ে বাংলায় লিখতে পারি এবং স্বাক্ষরের নিচে ঐ এমেইল যে অভ্র দিয়ে লেখা হয়েছে সে সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া যেতে পারে। এটা অত্যাধিক ফলদায়ক।

ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারকারী রূপান্তর
অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বিজয়ের ব্যবহারকারীদেরকে (প্রিন্ট মিডিয়া বাদে) ভালো করে ফ্রী অভ্র’র গুণাবলী বোঝাতে পারলে, অভ্র ব্যবহার করার জন্যে উৎসাহী হয়। যেহেতু অভ্র'তে কীবোর্ড লেয়াউট স্বাধীনতা রয়েছে, তাই আয়ত্ব করার কোনো ঝামেলা নেই। আর যারা পাইরেটেড বিজয় ব্যবহার করে তারাতো অভ্র’র এক নম্বর খদ্দেরের তালিকায়। এভাবে ব্যবহারকারীদেরকে রূপান্তর বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ।


অভ্র’র সামনের রাস্তা অত্যন্ত কন্টকমুক্ত, প্রশস্ত এবং পরিষ্কার। যেতে হবে অনেক দূর। উঠতে হবে অনেক উচ্চতায়। তাই ঝাপিয়ে পড়ি আরোহণে।

-এই নিবন্ধটি পড়ায় জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

১০টি মন্তব্য:

  1. "জাতির দুর্ভাগ্য যে, বাংলা ভাষার কোনো সর্বজন স্বীকৃত প্রমিত কীবোর্ড লেয়াউট নেই,..."
    => বাংলাদেশে একটা "জাতীয় কী-বোর্ড" লেআউট আছে।

    উত্তরমুছুন
  2. অসাধারণ লেখা। পুরোটা এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। প্রায় প্রতিটি কথার সাথেই একমত পোষণ করছি।

    উত্তরমুছুন
  3. subeen ভাইকে বলছি, বাংলাদেশে যে "জাতীয় কী-বোর্ড" লেআউট আছে, সেই লেআউট এ কয়জন টাইপ করতে পারে অথবা কতজন সেই লেআউটটা জানে?

    লেখাটি চমৎকার হয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে ‘বিজয়’ কে হঠানো অসম্ভব কঠিন একটা কাজ। কেননা একটা নতুন কী-বোর্ড লেআউট এ অভ্যস্ত হওয়া বেশ কষ্টকর ব্যাপার।

    উত্তরমুছুন
  4. ইরতেজা, বিজয় এর দুইটা কী(ব আর া) এদিক ওদিক করে জাতীয় কিবোর্ড বানিয়েছে। যারা বিজয় পারে তাদের জন্য কিন্তু খুব কঠিন না।

    উত্তরমুছুন
  5. @khanirteza, কতজন জাতীয় কী-বোর্ড লেআউট জানে সেটার কোন জরিপ সম্ভবত করা হয় নাই, করা হলেও আমার কাছে তথ্য নাই। তবে এটা জানি যে এই লে-আউট সরকারীভাবে তৈরি এবং অনুমোদন করা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  6. @ Subeen, Mostafa Jabbar has threatened BCC not to promote the national layout. And BCC has surrendered.

    উত্তরমুছুন
  7. "সর্বজন স্বীকৃত" and "সরকারীভাবে তৈরি এবং অনুমোদন" is not same thing..

    উত্তরমুছুন
  8. @ Subeen, Lin Rahaman, Khanirteza, Tanbin Islam Siyam, Shehab, Nazmul : মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

    একটা উদাহরণ দেয়া যাক। জাপানী ভাষার প্রচুর কীবোর্ড লেয়াউট রয়েছে। কোনো ভাষার জন্যে অনেক কীবোর্ড লেয়াউট থাকা স্বাভাবিক। শুধু একটি লেয়াউট থাকাটা আশ্চর্যের ব্যাপার। মেইনফ্রেমের যুগ থেকে জাপানী ভাষার লেয়াউটের প্রচলন দেখা যায়। পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) আসার পর লেয়াউটের বিভিন্নতা ব্যাপক হয়। বলা বাহুল্য, এই লেয়াউটগুলো ইউনিকোডে ছিলো না, আসকিতে ছিল (সরলীকরণের জন্যে আসকি বলা হলো। প্রকৃতপক্ষে জাপানীর জন্যে আসকি ব্যবহৃত হয়নি বললেই চলে - জাপানী বর্ণ সংখ্যা বেশী বলে। আসকির ন্যায় ৭ বিটের যে কোডিংসমূহ ব্যবহৃত হতো তার মধ্যে জনপ্রিয় JIS X 0201, বর্তমানে জাপানী উইকিপিডিয়া ইউনিকোড এবং বেশীরভাগ জাপানী ওয়েব সাইট Shift-JIS ব্যবহার করে) । তখন প্রচলিত কীবোর্ড গুলোর মধ্যে IBM 5576-A01 কে Japanese Industrial Standard (JIS) থেকে স্ট্যাডার্ড হিসেবে নেয়া হয়। এর সাথে আরো কিছু লেয়াউটকে 'স্ট্যান্ডার্ড পরিবার' এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকে IBM 5576-A01 কীবোর্ড লেয়াউটটি প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমের (ওএস) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্য আরো যত জাপানী লেয়াউট থাকুক না কেনো, এটি অবশ্যই থাকবে। এখন ৯৫% এর উপর এই লেয়াউট (বা এর কিঞ্চিত পরিবর্তিত লেয়াউট) ব্যবহার করে (৯৯% বললে হয়ত ভুল হবে না, কিন্তু কীবোর্ড লেয়াউট নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া মুশকিল)। এই লেয়াউটের কীবোর্ড হার্ডওয়্যার ডেস্কটপ, লেপটপ কম্পিউটারের সাথে দেয়া থাকে। উল্লেখ্য, এই লেয়াউটের ইংরেজীর সাথে ইউএস ইংরেজী লেয়াউটের কিছুটা পার্থক্য আছে। বিদেশীদের মধ্যে যারা ঐ পার্থক্যটুকু আয়ত্ত্ব করে নেন, তারা জাপানী কীবোর্ড হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে ইংরেজী লিখতে পারেন। নতুবা বাজার থেকে ইউএস ইংরেজী কীবোর্ড কিনতে হবে, যা জাপানী কীবোর্ডের চেয়ে দামী। এজন্যে কীবোর্ড লেয়াউটের ভিত্তিতে জাপানী ও ইংরেজী লেপটপ সম্পুর্ণ আলাদা দুটি প্রোডাক্ট (ওএসও ভিন্ন থাকে)।
    "সর্বজন স্বীকৃত প্রমিত কীবোর্ড লেয়াউট" এর সম্পর্কিত উদাহরণটি এখানে শেষ।

    @khanirteza: "কেননা একটা নতুন কী-বোর্ড লেআউট এ অভ্যস্ত হওয়া বেশ কষ্টকর ব্যাপার"
    - এখানে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, অভ্র'তে লেয়াউট স্বাধীনতা আছে। অভ্র ব্যবহার শুরু করার ক্ষেথে, নতুন কীবোর্ড লেয়াউটে অভ্যস্ত হওয়ার কোনো দরকার নেই। যে লেয়াউটে অভ্যস্ত সেটা ব্যবহার করেই অভ্র দিয়ে লেখা যায়। এজন্যে দেখুন - Avro Keyboard 4.5.1 User Manual - "Creating/Editing Fixed Keyboard Layout"

    উত্তরমুছুন
  9. অসাধারণ লেখা। খুব ভাল লাগল। প্রায় প্রতিটি কথার সাথেই একমত পোষণ করছি।

    উত্তরমুছুন
  10. ভাল লাগলো। কিন্তু আমি দুঃখ পেয়েছি।

    উত্তরমুছুন