সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বিজয় ব্যবহারকারীরা কেন অভ্র ব্যবহার শুরু করবেন


কম্পিউটারে বাংলা লিখার সফটওয়্যার বিজয় ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহারের আহবান জানিয়ে এখানে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমনঃ কীবোর্ড লেয়াউট সম্পাদনের মাধ্যমে অভ্র দিয়ে বিজয় লেয়াউট ব্যবহার; বিজয়ের লাইসেন্স, পোর্টেবিলিটি ও বিবিধ সমস্যা; অভ্র'র লিনাক্স, ফোরাম ও ইউনিকোড সুবিধা; ইত্যাদি। এ থেকে বোঝা যায়, বিজয় সফটওয়্যার ছেড়ে অভ্র ব্যবহার করা যৌক্তিক।

অভ্র কীবোর্ড
যে কোনো ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে যে কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করার। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যারা অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহার করে, তারা এটি ব্যবহার করে খুব সন্তুষ্ট। বিনামূল্যে এত ভালো সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্যে অভ্র টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অভ্র'র প্রচার করা হয়। কেননা, ঐ ব্যক্তি পরিপূর্ণ মানুষ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্যে যা ভালো মনে করে, তা অন্য মানুষের জন্যে ভালো মনে না করে। তাই অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যারের গুণাবলী ও বিজয় সফটওয়্যারের ত্রুটি উল্লেখ করে, অভ্র ব্যবহারের অনুরোধ রাখা।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনি যদি ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন বা প্রিন্ট মিডিয়াতে কাজ করেন, তবে এই লেখাটি আপনার জন্যে নয়।

কীবোর্ড লেয়াউট স্বাধীনতা
অভ্র দিয়ে ইচ্ছে মত যে কোনো কীবোর্ড লেয়াউট বানানো ও সাজানো যায়। অভ্র'র কীবোর্ড সফটওয়্যারের সাথে দেয়া 'Keyboard Layout Editor' প্রোগ্রাম দিয়ে যে কোনো custom কীবোর্ড লেয়াউট নিজের ইচ্ছে মত বানানো যায়। এমনকি, যে কীবোর্ড লেয়াউটগুলো বর্তমানে কম্পিউটারে আছে (যেমনঃ বর্ণনা, প্রভাত, জাতীয় ইত্যাদি), সেগুলোকে পুনোর্বিন্যাস করা যায়। এই সব custom কীবোর্ড লেয়াউট গুলোকে ইচ্ছে মাফিক নাম দিয়ে সংরক্ষণ করে, যে কোনো কম্পিউটারের সাথে কপি/শেয়ার করে ব্যবহার করা যায়। তাই, অভ্র দিয়ে কীবোর্ডের বোতামগুলোতে বাংলা অক্ষরকে বিন্যাস ও পুনোবিন্যাস করা কোনো ঘটনাই না। এমন কি অভ্র কিবোর্ড সফটওয়্যার দিয়ে বিদেশী ভাষার কীবোর্ড লেয়াউট পর্যন্ত বানানো যায়। যেমনঃ জাপানী।

অভ্র দিয়ে বিজয় লেয়াউট
যেহেতু অভ্র দিয়ে যে কোনো কীবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করা যায়, তাই বিজয় সফটওয়্যারের সাথে যে বিজয় কীবোর্ড লেয়াউট থাকে সেটাও অভ্র দিয়ে ব্যবহার করা যায়। তার জন্যে প্রয়োজন, কীবোর্ডের বোতাম গুলোতে বাংলা অক্ষরগুলোকে এমন ভাবে সাজানো যেটা বিজয় কীবোর্ড লেয়াউটের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। অভ্র’র সাথে দেয়া 'Keyboard Layout Editor' প্রোগ্রাম দিয়ে তা অতি সহজে করা যায়। এরপর, এভাবে তৈরী কীবোর্ড লেয়াউটকে নতুন নাম দিয়ে উইন্ডজের ‘C:\Program Files\Avro Keyboard\Keyboard Layouts' ফোল্ডারে সংরক্ষণ করা হলে, তা অভ্র দিয়ে ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে। এখান থেকে এরকম একটি বিজয় কীবোর্ড লেয়াউট ডাউনলোড করা যাবে।
অনেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউটের কথা জানেন। এটি অভ্র’র তৈরী করা একটি লেয়াউট যা বিজয়ের সাথে শুধু ৮টি কী’তে পার্থক্য রয়েছে। বাস্তব উদাহরণ থেকে দেখা গেছে, যারা বিজয় সফটওয়্যার ছেড়ে অভ্র ব্যবহার শুরু করেছেন, তারা খুব সহজেই ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউট ডাউনলোড করে, উপরে উল্লেখিত ফোল্ডারে স্থাপন করে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের জন্যে অভ্র দিয়ে লিখা শুরু করতে কোনো ঝামেলা নেই। তাদের অভ্যস্ত লেয়াউট দিয়েই অভ্র সফটওয়্যারের সাহায্যে বাংলা টাইপ করা যায়।

লাইসেন্স
অভ্র হচ্ছে একটি ফ্রীওয়্যার বা ফ্রী সফটওয়্যার। অর্থাৎ, এটাকে ইচ্ছে মত ব্যবহার ও বিতরণ করা যায় বিনামূল্যে। অপর দিকে বিজয় হচ্ছে, ইউলা (EULA-End User License Agreement) লাইসেন্সের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যার শর্ত হচ্ছে – বিজয় সফটওয়্যারের একটি কপি শুধু একটি কম্পিউটারে ব্যবহার করা যাবে। এই বিজয় সফটওয়্যার বন্ধুদের সাথে কপি করে শেয়ার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তি যদি তার ডেস্কটপ ও লেপটপ, এই দুটি কম্পিউটারে বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চায়, তবে তার দুটি লাইসেন্স কিনতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য ভান্ডার তৈরীর জন্যে ব্যবহৃত লেপটপগুলোতে বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্যে ৫ কোটি টাকা লাইসেন্স ফী দাবী করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন যদি নিজেরা বাংলা টাইপ করার এরকম একটা সফটওয়্যার তৈরী করত, তবে ৫ লাখ টাকাও খরচ হবার কথা না। ওমিক্রন ল্যাবের পক্ষ থেকে মেহদী হাসান খান অভ্র সফটওয়্যারকে সেখানে বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেন।
কোনোভাবে যদি বিজয় সফটওয়্যারের ইন্সটলার সিডিটি (যেমনঃ স্ক্র্যচ পড়ার কারণে) পড়া না যায়, তবে বিজয় কোম্পানি ব্যবহারকারীকে আর একটি সফটওয়্যার সিডি দিবে না। বা কোনো বন্ধু থেকে কপি করে বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না। কোনো ওয়েব সাইট থেকেও এটা ডাউনলোড করা যায় না। কোনো ব্যক্তি যদি তার বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিজয়ের লাইসেন্স কপি আমেরিকাতে নিয়ে যায় এবং সেখানের অফিস ও বাসার কম্পিউটারে ব্যবহার করতে চায়, সেটা লাইসেন্স মোতাবেক-অনৈতিক। তার জন্যে অবশ্যই আলাদা এবং নতুন করে দুটি লাইসেন্স কিনতে হবে। নয়ত, ব্যবহারকারী কপিরাইট লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবে। এটি একটি বড় ব্যপার। কেননা, এই অভিযোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার ভালো উপায় (অভ্র ব্যবহার) থাকার পরও যদি কেউ কপিরাইট লংঘন করে তবে সেটা অমার্জনীয় বলা যায়।

পোর্টেবল
অভ্র’র standard edition কে ডেস্কটপ/লেপটপ কম্পিউটারে ইন্সটল করে ব্যবহার করা যায়। আবার portable edition কে ইন্সটল না করে ব্যবহার করা যায়- USB থেকে। এই পোর্টেবল ভার্সনের সাথে বাংলা ফন্টও দেয়া আছে। অর্থাৎ, যে কোনো কম্পিউটারে যে কোনো সময়ে অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। বিজয় ব্যবহার করলে এই সুবিধা নেই। সাইবার ক্যফেতে গেলে বা অন্যদের কম্পিউটারে, যদি বিজয় ইন্সটল করা না থাকে তবে বাংলা লিখা সম্ভব না। অন্য কারো লাইসেন্স করা কপি সেখানে ইন্সটল করা যাবে না, কারণ সেটা বিজয় লাইসেন্সে অনুমোদিত নয়।
বিজয় সফটওয়্যারের পক্ষ থেকে পোর্টেবল ভার্সন বের করার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারন, প্রোপ্রাইটরি সফটওয়্যারের মূলনীতি হচ্ছে, প্রত্যেকটি কম্পিউটারের জন্যে আলাদা লাইসেন্স ফী। তাই একবার বিজয় পোর্টেবল ভার্সন কিনে সেটা যে কোনো কম্পিউটারে ব্যবহার করা কল্পনাও করা যায় না।

ইউনিকোড
অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার প্রথম থেকে ইউনিকোডের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এটি দিয়ে স্বাচ্ছন্দের সাথে ইউনিকোডে বাংলা লিখা যায়। ফলে, ইমেইলে, ওয়েবপেজে অভ্র দিয়ে বাংলা লিখতে কোনো সমস্যা হয় না বললেই চলে। বিজয় প্রথম থেকে আসকির উপর নির্ভরশীল। পরবর্তীতে ইউনিকোড সমর্থন যুক্ত করা হলেও ইমেইলে, ওয়েবপেজে বিজয় দিয়ে বাংলা লিখতে কিছু সমস্যা দেখা যায়।

ফ্রী আপগ্রেড
অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার যেমন ফ্রী, তেমনি এর যে কোনো নতুন ভার্সনও ফ্রী। কিন্তু, বিজয় সফটওয়্যারের কোনো আপগ্রেড করতে হলে তার জন্যে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হয়।

বিজয় সমস্যা
বিজয় সফটওয়্যারের অনেক ত্রুটি সুবিধিত। যেমনঃ প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, অক্ষর (বিশেষ করে যুক্তাক্ষর) ভেংগে যাওয়া, উইন্ডজের সাথে বা অন্য এপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সাথে সাংঘর্ষিক আচরণ ইত্যাদি।

ফোরাম
অভ্র’র রয়েছে একটি শক্তিশালী ব্যবহার গোষ্টি যারা অমিক্রণ ল্যাবের ফোরামের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। সেখানে যে কোনো ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে পারে। কখনো কিছু জানার থাকলে, তা প্রশ্ন করতে পারে। অমিক্রণ ল্যাবের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে। অভ্র কীবোর্ডের উন্নয়ন/পরিবর্তন/পরিবর্ধনের জন্যে নতুন ফিচারের পরামর্শ দিতে পারে। বিজয়ের ক্ষেত্রে এরকম কিছু নেই।

লিনাক্স
অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যারের লিনাক্স ভার্সন রয়েছে। অর্থাৎ, লিনাক্স বেজড যে সব অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে (যেমনঃ লিনাক্স-মিন্ট, ডেবিয়ান, উবুন্তু ইত্যাদি), সেগুলোতে অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। বিজয় কীবোর্ডের কোনো লিনাক্স ভার্সন নেই।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, বাংলা টাইপ করার জন্য অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার অতুলনীয়। তাই  বিজয় ব্যবহারকারীদেরকে অভ্র ব্যবহার শুরু করার আহবান রইল। আসুন একে ছড়িয়ে দেই সবার মাঝে।

-------
এই ব্লগটি অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার দিয়ে লেখা। অভ্র হোক সর্বত্র

(এই লেখাটি ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ইং সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিল। সংরক্ষণের জন্যে ব্যক্তিগত ব্লগে পোষ্ট)

বুধবার, ৭ জুলাই, ২০১০

অভ্র-বিজয় সমঝোতা পরবর্তী উপাখ্যান

সম্প্রতি অভ্র-বিজয় সমঝোতা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কিছু বিশ্লেষণ ও পরবর্তী বিষয় নিয়ে এই লেখার অবতারণা।

অভ্র
২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ, ওমিক্রনল্যাব থেকে অভ্র কীবোর্ড নামে কম্পিউটারে বাংলা লেখার একটি ফ্রী সফটওয়্যার প্রকাশ করা হয়, যা দিয়ে ধ্বনি অনুযায়ী (ফনেটিক) ও সুনির্দিষ্ট (ফিক্সড) লেয়াউট উভয় পদ্ধতিতে লেখা যায়। কীবোর্ড ছাড়াও ওমিক্রনল্যাবের সৃষ্ট আরো ফ্রী অবদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অভ্র কনভার্টার ও ফন্ট। ৪ এপ্রিল ২০১০, আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ও বিজয় সফটওয়্যারের সত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার জনকন্ঠ পত্রিকায় অভ্রকে পাইরেটেড ও এর উন্নয়নকারীদেরকে হ্যাকার বলেন। ব্লগে, ফোরামে ও ফেসবুকে এ অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ওমিক্রনল্যাবের পক্ষ থেকে মেহদী হাসান খান অভিযোগ অস্বীকার করে জবাব দেন। ২৫শে এপ্রিল ২০১০, জব্বার বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে মেহদীর বিরুদ্ধে কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ করেন।

সমঝোতা
১৬ জুন ২০১০, আগারগাঁও-এ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্যপ্রযুক্তিবিদের উপস্থিতিতে অভ্র ও বিজয়ের সমঝোতা হয়েছে। এটি একটি আনন্দের ব্যাপার। দুর্নীতিতে জর্জরিত বাংলাদেশে, অভ্র প্রতাপশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করে ধরাশায়ী করবে সেটা আশা করা যাচ্ছিল না। তার উপরে লড়াইটা আদালতে হলে একরকম। কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযোগ সরকারি কপিরাইট অফিসে। সরকারি কাজের প্রতি মানুষের আস্থা এখন যথেষ্ট প্রশ্ন সাপেক্ষ। ভরসা নেই বললেই চলে। দীর্ঘসুত্রীতা, নাজেহাল'তো আছেই। উপরন্তু এই অফিসের লোকজনদেরকে পকেটে ঢুকিয়ে রাখেনি, তা হলফ করে বলা যাবে না। কিছু মন্তব্য থেকে সে রকম লক্ষণ অনুমাণ করা অযৌক্তক নয়।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেনঃ আইনি সহায়তা এখন দুর্লভ বস্তু। একলাখ টাকার কমে আইনজীবীরা এখন জামিনের জন্যে আবেদনে হাত দেয় না (সূত্র)। অতএব, আদালত পর্যন্ত গড়ালে অভ্র টিমের কী নির্মম ভোগান্তি হোতো তা চিন্তা করা যায় না। মেহদী হাসান খান ও তার টিমের উপর বড় জরিমানার মত কঠিন খড়্গ আঘাত পড়া অসম্ভব ছিল না।
অভ্র'র প্রচুর ব্যবহারকারী রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে অভ্র'র জন্যে লড়াইয়ে নিবেদিত। ব্যবহারকারীর চেয়েও বেশী আছেন শুভাকাংখী। ব্লগে, ফোরামে ও ফেসবুকে অভ্র'র সমর্থনে যে গণ-জাগরণ চালু হয়েছে সেটাও উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তবে আইনি যুদ্ধে অভ্রকে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে, জিতিয়ে আনা যেতো কিনা। অত্যাধিক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আইনি রণক্ষেত্রে হেরে যাওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত সমসাময়িক বিশ্বে রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ও জে সিম্পসন মার্ডার কেস (O. J. Simpson Murder Case)। বিপক্ষে বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও সিম্পসন আইনি লড়াইয়ে জিতে যায় অর্থ শক্তি দিয়ে।
যদি ধরে নেয়া হয় যে, কপিরাইট অফিসে অভ্র জিতে গেলো, তবে আদালতে মামলা করার ঘোষণা আগেই দেয়া। সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত তার চেষ্টা দেখা যেতো। মনে করি, শেষ পর্যন্ত অভ্র জিতে গেলো। কিন্তু এর জন্যে যে পরিশ্রম, সময় ও অর্থ খরচ হতো তা কল্পনা করলে আঁৎকে ওঠার মতো। অধিকন্তু, শুধু একটা ইউনিবিজয় লেয়াউটের জন্যে ব্যয়টা একেবারে অযৌক্তিক।
এ সমস্ত প্রেক্ষিত বিবেচনা করে, সমঝোতা অভ্র'র জন্যে লাভজনক হয়েছে।

অভ্র'র জয়
প্রকৃতপক্ষে, অভ্র'র জয় হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, যুগে যুগে মহৎ লোকেরা প্রতিনিয়ত শান্তির পক্ষে ছিলেন। কিছু লোক সবসময় ধান্ধা ছাড়া কিছু বোঝেনা এবং ঝামেলা পাকাতে ওস্তাদ। আর এই সব ঝামেলার শিকার হতে হয় মহৎ লোকদের। কিন্তু সেখানেও তারা মহত্ত্বের পরিচয় দেন। নিজের ক্ষতি স্বীকার করে হলেও তারা দ্বন্ধের সুরাহা করে ফেলেন। সার্বজনীন মঙ্গলটা তারা সামনে রেখে চলেন। তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে সাময়িক ক্ষতি স্বীকার করে অগ্রসর হতে থাকেন।
পাইরেসির অভিযোগ অনেক দিন ধরে অভ্র'র জন্যে একটা পথের কাঁটা হয়ে থেকেছে। অনেক ক্ষেত্রে, সীমা অতিক্রম করে, বিভিন্ন পর্যায়ে অভ্রকে নিয়ে আপত্তিকর কথা (চোর) বলা হয়েছে। কখনো অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে উদ্ভট সব দাবী এসেছে, যেমনঃ সরকারী ওয়েব সাইটগুলো হ্যাক হওয়ার পিছনে অভ্র দায়ী। হাহ্!
এক সময়, পুরো অভ্রকে পাইরেটেড বলা হতো। তারপর সেটা বাদ দিয়ে, ইউনিবিজিয় লেয়াউটকে মোক্ষম লক্ষবস্তু বানানো হয়।
এ যাত্রায় অভিযোগের কাঁটা পথ থেকে দূর হলো। ওমিক্রনল্যাবকে উৎপীড়নকারীর মুখে অভ্র নিয়ে উচ্চ-বাচ্চ করতে পারার মত আর কোনো ইস্যু নেই। মুখ বন্ধ হলো। এখনেই অভ্র'র জয়।
ইতিহাসে দেখা যায়, সমঝোতা সন্ধির পর মহৎ লোকদের দল লাভবান হয় ও সামনে অগ্রসর হয়। আর পশ্চাৎধাবন করে প্রতিপক্ষ। নিয়তি এক সময় এদের বিলীন করে দেয়। গত মে মাসে, বাংলাদেশ মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয় থেকে সবগুলো মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দাপ্তরিক কাজে ইউনিকোড বাংলা ব্যবহার করার জন্যে। এবং ওমিক্রনল্যাব থেকে অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিয়েছে (সুত্র)। এরকম নির্দেশ সব জায়গায় আসবে।

অভ্র ও কীবোর্ড লেয়াউট
সমঝোতা অনুযায়ী, অভ্র থেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউট সরিয়ে নেয়া হবে। কেউ কেউ মনে করছে, এতে অভ্র'র সমস্যা বা লোকসান হবে। কিছু সংখ্যক ব্যথিত, হতাশ, অপমানিত বা রাগান্বিত হয়েছে। কিছু বাঙ্গালীর আবেগ প্রবণতা নিয়ে, নতুন করে আর কী বলার আছে? হার-জিতের একটা খেলায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা হারার পর ঐ দলের ও খেলোয়াড়দের মুন্ডুপাত করে। বাকরুদ্ধ হতে হয় যখন সাংঘর্ষিক ও আত্মঘাতি (সূত্র১, সূত্র২) দূর্ঘটনা দেখা যায়।
প্রকৃত পক্ষে, অভ্র থেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেয়াউট সরিয়ে নেয়াটা মেহেদীর শুধু একটা ঘোষণা মাত্র (অফিসিয়ালি অভ্র’র পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি)। অভ্র'র অনেক দারুণ দারুণ বৈশিষ্টের একটি হচ্ছে, এখানে নিজের ইচ্ছে মত নতুন যে কোনো কীবোর্ড লেয়াউট বানানো এবং পুরনো লেয়াউটকে পুনর্বিন্যাস করে, নয়া লেয়াউট হিসেবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যায়। এবং এই নতুন বানানো কীবোর্ড লেয়াউটগুলো যে কারো সাথে শেয়ার করা যায়। প্রাপ্ত লেয়াউট উইন্ডোজের 'C:\Program Files\Avro Keyboard\Keyboard Layouts' ফোল্ডারে কপি করে দিলেই তা ব্যবহার উপযোগী হয়ে যায়। তেমনিভাবে ঐ ফোল্ডারে বিদ্যমান কীবোর্ড লেয়াউট ফাইল মুছে দিলে সেই লেয়াউট অভ্র সফটওয়্যারে আর ব্যবহার করা যা্য না। অতএব, কোনো কীবোর্ড লেয়াউট সরানো বা যোগ করা অভ্র সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে কোনো ঘটনাই না। কারো অভ্র'র সাথে ব্যবহারের জন্যে যদি ইউনিবিজয় বা বিজয়ের কীবোর্ড লেয়াউট দরকার হয় তা অনায়াসেই পাওয়া যায় এবং যাবে।
অনেকে হয়ত শুনে অবাক হতে পারেন যে, অভ্র'তে শুধু বাংলা ভাষা নয়, অন্য ভাষার কীবোর্ড লেয়াউট পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, যেমনঃ জাপানী। আমি দুই ধরণের জাপানী লিখন পদ্ধতি- হিরাগানা (৬৬টি বর্ণ) ও কাতাকানার (৬৬টি বর্ণ) জন্যে দুটি আলাদা কীবোর্ড লেয়াউট বানিয়ে পরীক্ষা করে সফল হয়েছি। তৃতীয় জাপানী লিখন পদ্ধতি, কাঞ্জি (প্রায় ৩০+ হাজার সংকেত)। বলা বাহুল্য, এর জন্যে কোনো কীবোর্ড লেয়াউট নেই। হিরাগানা ও কাতাকানাতে, ইংরেজীর মত কোনো যুক্তাক্ষর না থাকায়, অভ্র দারুণ কাজ করে। নিশ্চিত করে বলা যায়, যুক্তাক্ষর নেই এরকম ভাষার লিপি লিখতে অভ্র'র বর্তমান প্রচলিত ভার্সন নিঁখুত কাজ করবে।

বাংলা প্রমিত লেয়াউট
জাতির দুর্ভাগ্য যে, বাংলা ভাষার কোনো সর্বজন স্বীকৃত প্রমিত কীবোর্ড লেয়াউট নেই, অথচ, একটি প্রচলিত লেয়াউটের কপিরাইট ও পেটেন্ট সংরক্ষিত আছে। তার জন্যেও বাঙ্গালীর ক্ষোভ আছে। কিন্তু এখানে অভ্র’র উপরে ফোকাস করছি বলে সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

কাজের সময়
এখন সময় এসে গেছে পুরো দমে কাজে নেমে পড়ার। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় –
চল চল চল
ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।
ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটাব তিমির রাত
বাঁধার বিন্ধ্যাচল।...
কাজ আছে বহু। শুধু ওমিক্রনল্যাবের উপরে সব কাজের দায়িত্ব চাপাতে একেবারে অনিচ্ছুক। তাদের অবদান দেখে তাদের কাছে জোর দিয়ে কিছু চাইতে একটু লজ্জা করে। অভ্র'কে ওপেন সোর্স হিসেবে প্রকাশের দাবি শোনা যায়। অভ্র'র লিনাক্স ভার্সনের সোর্স প্রকাশিত আছে। মেহদী হাসান খান উইন্ডোজ ভার্সনের সোর্স প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন ডিসেম্বর ২০০৭ এ। যে সব কারণে এখনো সোর্স প্রকাশ করা হয়নি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিরাপত্তা সমস্যা। অভ্র ও ওপেন সোর্সের সমাধান করবে সময়।

যাদেরকে অনুরোধ
তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ জন রয়েছেন দেশে ও বিদেশে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রচুর নজর কাড়া অবদান রয়েছে। নিঃসন্দেহে, যে কোনো বিভাগে আস্থা রাখার মত জনসম্পদের ঘাটতি নেই। তাদের উপর ভরসা রেখে এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা। আর কিছু বিষয় সর্বসাধারণের জন্যে।

ম্যাক ভার্সন
অভ্র'র ম্যাক ভার্সন এখনো বের হয়নি। কি পরিমাণ বাংলা ভাষাভাষী ম্যাক ব্যবহার করেন সেটি হয়ত একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজয়ের ম্যাক ভার্সন আছে। ছোট ক্ষেত্র হলেও এইখানে অভ্র বিজয়কে কোনো প্রতিযোগীতার মুখোমুখি করতে পারছে না। এ কারণে, এটিকে কাজের তালিকায় উপরের দিকে রাখতে হয়।

প্রিন্ট মিডিয়া, ফন্ট ও উন্নয়ন
দ্বিতীয় গুরুত্বপুর্ণ হলো, প্রিন্ট মিডিয়াতে অভ্রকে প্রতিষ্ঠিত করা। এখানে বিজয় যে অবস্থানে আছে, তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এই জ্বালা শুধু সয়ে যাচ্ছি। এরকম অনেকে আছেন, যারা সব ক্ষেত্রে অভ্র ব্যবহার করেন, কিন্তু প্রিন্টের কাজের জন্যে অভ্র ব্যবহার করতে না পেরে পথ চেয়ে আছেন কবে সেই দিন আসবে। বাজি ধরে বলা যায়, প্রিন্ট মিডিয়াতে যখন অভ্র আধিপত্য বিস্তার শুরু করবে, বিজয় তখন যাদুঘরে চলে যাবে। এজন্যে হয়ত অভ্রকে কিছু গভীরে ভাবতে হবে এবং সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রিন্ট মিডিয়ায় এবং বাদ বাকি ক্ষেত্রে ফন্ট ডিজাইনের কাজ রয়েছে। ভালো ও ফিচার সমৃদ্ধ ফন্টের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এছাড়া অভ্রকে আরো নতুন নতুন বৈশিষ্টমন্ডিত করার জন্যে অনেক প্রস্তাব ইতিমধ্যে আছে। যারা দেশে-বিদেশে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা সম্পর্কিত কাজ করেন তারা এখানে অবদান রাখেন।

অভ্র-টি শার্ট
অভ্র সফটওয়্যার উন্নয়নের সাথে সাথে প্রচারের মাধ্যমে একে সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। টি-শার্ট ছাপিয়ে অভ্র'র প্রচারের জন্যে একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। যারা ছাপিয়েছেন তারা অভ্র'র প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে এটা করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। অভ্র টি-শার্টের প্রচলন বৃদ্ধি পাক আরো জোরেসোরে। প্রিয়জনকে দেয়া আমাদের উপহার হোক অভ্র টি-শার্ট।

সাইট লিংক যোগ করা
অনলাইনে ব্যক্তিগত, সঙ্ঘ, প্রতিষ্ঠান বা ফোরামের ওয়েব সাইটে অভ্র'র তথ্য উপস্থাপন করা এবং সেখানে ওমিক্রনল্যবের লিংক যুক্ত করা। এতে অভ্র'র যে শক্তিশালী ব্যবহারকারী গোষ্ঠী রয়েছে তার প্রমাণ থাকে ইন্টারনেটে। কেউ চাইলে অনলাইন পরিসংখ্যান চালিয়ে অভ্র গোষ্ঠী সম্পর্কে ভৌগলিক অবস্থান, বিষয়বস্তু/ক্ষেত্র ও অন্যান্য ভিত্তিক চমকপ্রদ তথ্য নির্ণয়-বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করতে পারেন।
উপরন্তু, অধিক সংখ্যক ইনলিংক (www.omicronlab.com এর প্রতি রেফারেন্স) পেলে ওমিক্রনল্যাবের সাইট সার্চ র‌্যাঙ্ক অনেক বেড়ে যাবে। এতে ওমিক্রনল্যাবে বিদ্যমান তথ্যের মূল্য গুগল বা ইয়াহু ইত্যাদির কাছে বৃদ্ধি পাবে। ফলে, সার্চ এঞ্জিনের মাধ্যমে আগের চেয়ে বেশী মানুষ ওমিক্রনল্যাবের সাইটে ঢুকবে, যা নিঃসন্দেহে অভ্র ব্যবহারকারী বাড়াবে।
আশ্চার্য মনে হলেও সত্যি, যারা বিজয় খুঁজবে, তারাও ওমিক্রনল্যাবে ঢুকবে। বর্তমানে 'বিজয় কীবোর্ড' বা 'bijoy keyboard’ দিয়ে গুগলে খুঁজলে, প্রথম দিকে প্রকৃত বিজয়ের কোনো সাইটের গন্ধও পাওয়া যায় না, বরং অন্যান্যের সাথে ওমিক্রনল্যাবের সাইটও আসে। অপরদিকে, ‘Avro Keyboard’, ‘অভ্র কীবোর্ড’ বা শুধু ‘অভ্র’ দিয়ে সার্চ করলে, ওমিক্রনল্যাবের আগে কেউ নেই। এটাকি অভ্র'র জয়ের প্রমাণ নয়?
প্রসঙ্গক্রমে বলা, বাংলাইংরেজী উইকিপিডিয়ায় অভ্র কীবোর্ডের বর্ণনা, উন্নয়ন, বৈশিষ্ট ইত্যাদির উপর দুটি সন্তোষজনক নিবন্ধ রয়েছে। বিজয় সংক্রান্ত উইকিপিডিয়াতে আদৌ কোনো নিবন্ধ নেই।
অনলাইন সার্চ রেজেল্টে অভ্র'র প্রাধান্যের ব্যপারটি প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছে অভ্রকে পৌঁছাতে ব্যাপক সাহায্য করে। আমাদের মূলধারার মিডিয়াগুলোতে ব্যবহারিক প্রয়োগ ও প্রকাশনাতে অভ্র'র উপস্থিতি এখনো সেরকম পর্যায়ে নয় (প্রবাসীরা অনেকে পত্রিকার ভিতরের পৃষ্টাগুলো দেখেন না) বলে অনেক প্রবাসী এর সম্পর্কে অনবহিত। তবে মূলধারাতেও জোয়ারের ধাক্কা লাগছে ভালোভাবে।

গল্প ও ব্লগ
সচলায়তনে অসাধারণ একটা রূপকথার গল্প লিখেছেন নীড় সন্ধানী, 'আন্ডামারার যদু কাগু'। এরকম একটা গল্প এক মাসের সমান প্রচারের কাজ দেয়। মানুষের মনে গেথে যায় অভ্র-বিজয়ের প্রকৃত রূপ। তাকে আর বোঝানোর দরকার হয় না। নিজেই অভ্র'র প্রচারে নেমে পড়ে। এরকম মূলধনী গল্প সামনে আরো আসবে সে আশা রাখছি।
আর ব্লগারদের কথা বলা বাহুল্য। অভ্র'র অবদানে ব্লগের আজ এ অবস্থান। তারা সমর্থন জানিয়ে ও নিত্য-নতুন চৌকশ আইডিয়া উপস্থাপন করে যান।

গ্রাফিকস ও মাল্টিমিডিয়া
আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো সচিত্র প্রচার। মাল্টিমিডিয়াও এখানে উল্লেখ্য। গ্রাফিক/এনিমেশন ডিজাইন যারা করেন তারা অভ্র’র উপর প্রচারমুলক (অথবা বিজয়কে ধিক্কারমুলক) বিভিন্ন ব্যানার, কার্টুন তৈরী করেন। এগুলো ভালো কাজ দেয়।

ইমেইল সাক্ষরের মাধ্যমে
একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, কোনো বিষয়ে সাধারণভাবে আমরা যখন জেনে যাই তখন সেটাকে যতটুকু গুরুত্ব দেই তার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই যখন কোনো পরিচিত জনের কাছ থেকে বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত হই বা কেউ একজন ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বলে। আমাদের ইমেইল যোগাযোগের ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। তাই যখন কোনো বাংলা ভাষাভাষীর সাথে ইমেইলে কথা হয় সেটা আমরা অভ্র দিয়ে বাংলায় লিখতে পারি এবং স্বাক্ষরের নিচে ঐ এমেইল যে অভ্র দিয়ে লেখা হয়েছে সে সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া যেতে পারে। এটা অত্যাধিক ফলদায়ক।

ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারকারী রূপান্তর
অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বিজয়ের ব্যবহারকারীদেরকে (প্রিন্ট মিডিয়া বাদে) ভালো করে ফ্রী অভ্র’র গুণাবলী বোঝাতে পারলে, অভ্র ব্যবহার করার জন্যে উৎসাহী হয়। যেহেতু অভ্র'তে কীবোর্ড লেয়াউট স্বাধীনতা রয়েছে, তাই আয়ত্ব করার কোনো ঝামেলা নেই। আর যারা পাইরেটেড বিজয় ব্যবহার করে তারাতো অভ্র’র এক নম্বর খদ্দেরের তালিকায়। এভাবে ব্যবহারকারীদেরকে রূপান্তর বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ।


অভ্র’র সামনের রাস্তা অত্যন্ত কন্টকমুক্ত, প্রশস্ত এবং পরিষ্কার। যেতে হবে অনেক দূর। উঠতে হবে অনেক উচ্চতায়। তাই ঝাপিয়ে পড়ি আরোহণে।

-এই নিবন্ধটি পড়ায় জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।